"চাচি বলেন, কিন্তু বাজান, মুই কই, দেওরে যদি হিন্দুস্থান যায়েন, তো দুইদিনও বাচলেন না। মুইতো এ্যারগো রগ চিনি। কেউ কেউরে ছাড়া থাকতে পারবে না। এই তো গেছেলে, কাফুরাইয়া পাট্টির ননী দত্তর বাফে। ছয় মাস কাড়ে নায়, খবর আইলে – হে মরছে। এহন দেওররে যুদি মুই ছাড়ি, হে বাচপে, কও?
এ এক অসম্ভব অভিজ্ঞতা। দেশভাগ, দেশত্যাগ, অগণিত মানুষের উঞ্ছজীবন, নানান কথা মনে আসে। শৈশবে যখন দেশ ছাড়িনি, যতদিন ছিলাম, দেখেছি, আমাদের খালের ঘাটে কত নৌকা এসে লাগত। একে দুইয়ে গ্রামের বর্ধিষ্ণু পরিবারগুলো সবাই হিন্দুস্থানের উদ্দেশে যাত্রা করত। যাবার সময় চোখের জলে বুক ভিজিয়ে নৌকোয় উঠত সবাই। ঘাটের পাশে একটা বিশাল রেইনট্রি ছিল। সে যেন সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সেই বৃক্ষের এমন মহিমান্যতা ছিল যে, যারা জন্মের মতো দেশ ছেড়ে চলে যেত, তারা আভূমি নত হয়ে প্রণাম করত তাকে। কেন করত জানি না। হয়তো বলত — আমরা চলে যাচ্ছি, ক্ষমা করো আমাদের। এই বৃক্ষ যেন ওখানকার তাবৎ মনুষ্যকুলের আদিম বীজপুরুষের প্রতিভূ।
জয়নাব চাচি তার মেয়ের মাথায় হাত বোলান। বলেন, তুমি বাজান দেওররে এট্টু বুজাইয়া যাও। মোরে তো আম্মা ডাকতে কেউ নাই। এতগুলান পোলাপান মানুষ করলাম, মোর কবরে মাডি দেওনের লাইগ্যা কেউ থাকপে না। দেওরে যদি যায়েন, হেলেতো যে যা কউক পোলাপান গুলারেও লইয়া যাইবে। তই মুই কী লইয়া থাহুম। হেঁচকি তুলে কাঁদেন চাচি। তাঁর কোলের মধ্যে মাথা রেখে তার মাইয়ায় তখন 'দেউলা' করে।"
সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম
মিহির সেনগুপ্ত
Siddhiganjer Mokam || সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম || Mihir Sengupta
Book - সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম
Author - মিহির সেনগুপ্ত
Binding - Hardcover
Publishing Date - 2022
Publisher - Suprokash Publisher
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ Language - Bengali