সাইবার ক্রাইমের ভ্যাকসিন
বাংলাতে প্রথমবার বাস্তব ঘটনা নিয়ে জামতাড়ার উপর একটা বই লেখা হচ্ছে, এই খবরটা ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং করার সময়ে জানতে পেরেছিলেন ‘জামতাড়া— সবকা নম্বর আয়েগা’ খ্যাত অভিনেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। লেখককে নিজের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে একমিনিটেরও কম সময় নেন তিনি। একটা বই লেখার সময় এমন চমকপ্রদ ঘটনা ঘটলে চাপ বাড়ে বই কী!
পাঠকের মনে এই প্রশ্নের অবতারণা খুব স্বাভাবিক, শুরুতেই কেন এমন প্রসঙ্গ? উত্তরটা সহজ করে বলি। সকলের কাছে অনুরোধ, এই বইটা পড়তে শুরু করার আগে জামতাড়া নিয়ে ওয়েব সিরিজটা একটু দেখে নেবেন। একমাত্র তাহলেই বাস্তব আর অবাস্তবের ফারাকটা বোঝা সম্ভব হবে। অকারণে মনে হবে না, দুটোর মধ্যে যেন অনেক মিল আছে। আমি জানি, আজকের পাঠক অনেক বেশি সচেতন। তবে তাঁদের এটা বলে আশ্বস্ত করতে চাই, ২০১৬ সালে ওয়েব সিরিজের কনসেপ্ট আমাদের দেশে এত জনপ্রিয় ছিল না। আর ঠিক সেই সময় আমি প্রথমবারের জন্য জামতাড়া গিয়েছিলাম।
পাঠকবন্ধুদের এটাও জানিয়ে রাখি, ওয়েব সিরিজে দেখানো ওটিপি স্ক্যাম এখন খোদ জামতাড়াতে ব্যাকডেটেড। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পুরো এলাকা যেন সাইবার অপরাধের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছে।
২০১৬-র পর আরও দু-বার সেখানে গিয়ে আমি নিজেই চমকে গিয়েছি নতুন জামতাড়াকে দেখে। এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্যও আসলে সেটাই। গুগল ঘেঁটে তথ্যের কচকচানি, অথবা পুলিশের মুখের তামাক খেয়ে নয়, বরং এই বইয়ে উঠে এসেছে গ্রাউন্ড জিরো থেকে এক ছদ্মবেশী অনুসন্ধানী সাংবাদিকের লম্বা সফরের বৃত্তান্ত। সহজসরল করে লেখা প্রতিটি ঘটনা পড়লে পাঠক প্রতারণার বিভিন্ন পর্যায় জানার পাশাপাশি সচেতনও হতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বলছে, গত দু-বছরে আমাদের দেশে প্রায় সত্তর শতাংশ বেড়েছে সাইবার অপরাধ। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত আয় থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। আগামীতে এই হোয়াইট কলার ক্রাইম তামাম দুনিয়াকে ভোগাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে সতর্কও করেছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাই নিজে সাবধান এবং সচেতন হতে এই বই নিশ্চিন্তে পড়ে ফেলতে পারেন। আশ্বস্ত করছি, ঠকবেন না। করোনার টিকার মতো এটাও ভ্যাকসিনের কাজ করবে।
বই লেখার কাজে অনেকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। আমাদের রাজ্যের সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের নামটা শুরুতেই করতে হয়। তিনি প্রথম আমাকে জামতাড়া জায়গাটার কথা বলেছিলেন। কৃতজ্ঞ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মার কাছে। তাঁর রেফারেন্স অচেনা অজানা জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ভীষণ উপকারে লেগেছিল। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কিঞ্জল ঘোষ, সহকর্মী হিমাদ্রি সরকার, কৌশিক প্রধানের অবদান ভোলার নয়। উৎসাহ পেয়েছি অর্মত্য মুখোপাধ্যায়, গৌরব অধিকারীদের কাছ থেকেও। প্রচ্ছদটা বরাবরের মতো দুর্দান্ত এঁকে আমাকে আরও ভালো লেখার চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বন্ধু, বিখ্যাত আঁকিয়ে উদয় দেব। লেখার কাজে বাড়ির লোকেরা, বিশেষ করে মা-শাশুড়ি, ছেলে-বউয়ের অবদান স্বীকার না-করা অপরাধ। আমি কৃতজ্ঞ ‘এই সময়’-এর সম্পাদক এবং কর্তৃপক্ষের কাছে। বইয়ের বানান সংশোধনে অনমিত্র রায়ের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বুক ফার্মের শান্তনু, কৌশিক, সোনাল, সুমিত, প্রদীপ এরা লেগে না থাকলে বইটা হয়তো ২০৫০ সালে প্রকাশিত হত। ধন্যবাদ প্রাপ্য ওদেরও।
সবশেষে, প্রণাম ও শ্রদ্ধা পাঠকদের। স্রেফ আপনাদের প্রশ্রয়ে ছ-নম্বর বইটাও লিখে ফেললাম সাহস করে। আগেরগুলোর মতো এই বই পড়ে, গঠনমূলক সমালোচনা করুন। সমৃদ্ধ হব। ভালো থাকুন আপনারা সবাই। আর চলুন, সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করি।
শুভেচ্ছান্তে,
চিত্রদীপ চক্রবর্তী
HELLO,JAMTARA || হ্যালো, জামতাড়া || CHITRADEEP CHAKRABORTY
Book -
হ্যালো জামতাড়া
Author - চিত্রদীপ চক্রবর্তী
Binding - Hardcover
Publishing Date - 2022
Publisher - BOOK FARM
প্ৰচ্ছদ ও অলংকরণ - ..
Language - Bengali
-