জানলা দিয়ে রোদ এসে বিছানায় পড়েছে লক্ষ্মী মূর্তিটির ওপর । রোদ ঝলমল করে উঠছে লক্ষ্মী মূর্তিটি। এটা যে সে মূর্তি নয়, এর পেছনে রয়েছে অনেক বছরের ইতিহাস। উমাকান্ত বাবুদের পৈতৃক বাড়ি ছিল রাজাভাতখাওয়াতে। রাজাভাতখাওয়া যে শুধু বক্সা টাইগার রিজার্ভএর প্রবেশদ্বার তা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের নানান কাহিনী।
ঐতিহাসিকদের মতে ১৭৬৫ সালে কোচবিহারের তখনকার রাজা ধীরাজেন্দ্র নারায়ণের সাফল্যকে সহ্য করতে পারেননি ভুটানের রাজা দেবরাজ। বক্সার আশেপাশের জমি দখল নিয়ে কুচবিহারের রাজার সঙ্গে তার বিরোধ চলে । তিনি বারবার জায়গাটির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলেন, এবং তখনই তিনি তাঁর সেনাপতি এবং সৈন্যদলকে পাঠিয়ে রাজা ধীরাজেন্দ্র নারায়নকে বন্দি করে রাখেন। প্রথমে বক্সায় এবং পরবর্তীতে ভুটানের তৎকালীন রাজধানী পুনাখায় তাকে বন্দী করে রাখা হল।
ইতিমধ্যেই দেবরাজ বক্সার জমি দখল করে নেন । তখন কোচবিহার রাজ পরিবার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ব্রিটিশদের কাছে আবেদন রাখেন কুচবিহারের রাজাকে তার সিংহাসনে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। প্রথমে ব্রিটিশরা রাজি না হলেও পরবর্তীতে নিজেদের লাভের কথা ভেবে ওরা রাজি হয় এবং কুচবিহারের রাজাকে উদ্ধার করতে সাহায্য করে। ১৭৭৪ সালে ভুটানের রাজার সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি চুক্তি হয় এবং মুক্তি দেওয়া হয় কুচবিহারের রাজাকে। রাজা ধীরাজেন্দ্র নারায়ন তাঁর রাজ্যের দিকে রওনা দিলে রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং প্রজারা মিলে রাজাকে রাজকীয় অভ্যর্থনা করে এবং ওখানেই রাজাকে ভাত খেতে দেওয়া হয় বাঙালি মতে। এবং তারপর এই জায়গাটির নাম হয়েছিল 'রাজাভাতখাওয়া।'
সেই প্রজাদের মধ্যে ছিলেন উমাকান্ত বাবুর পিতৃ-পুরুষের একজন। আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন রাজা। তাছাড়াও মুক্তির সাদের উত্তেজনা তো ছিলই। তখনই রাজা তাঁর নিজের সঞ্চিত ধনরত্ন থেকে এই মূর্তিটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন তাঁকে। সেদিন ছিল লক্ষ্মীপুজো, উমাকান্ত বাবুর সেই পূর্বপুরুষ ও তাঁর পরিবার ভেবে বসেন কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা তিথির পবিত্র সময়ে এভাবে লক্ষ্মী এসেছেন তাঁদের ঘরে, তাই লক্ষ্মী মূর্তিটিকে নিজেদের সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসেবে মনে করে তাকে প্রতি লক্ষ্মী পুজোয় বড় প্রতিমার সামনে রেখে পুজো করতে শুরু করেন । তারপর ধীরে ধীরে বংশানুক্রমে সেই রীতি প্রচলিত হয়ে যায়।
BAJROKUHOK || বজ্রকুহক || HIMI MITRA ROY
Book -
বজ্রকুহক
Author - হিমি মিত্র রায়
Binding - Hardcover
Publishing Date - 2023
Publisher - BOOK FARM
প্ৰচ্ছদ ও অলংকরণ - অর্ক চক্রবর্তী
- রাহুল ঘোষ
Language - Bengali
-