ডক্টর বিরজাশংকর গুহের নাম শুনেছেন?? আচ্ছা বাদ দিন.... দয়ারাম সাহানির নাম?? আচ্ছা এদের নাম না শুনলেও রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। ওই ইতিহাস বইয়ে সিন্ধু সভ্যতা নিয়ে পড়তে গিয়ে তার নাম হয়তো শুনে থাকতে পারেন। কিন্তু ননীগোপাল মজুমদারের নাম নিশ্চয়ই শোনেন নি। অথচ ভেবে দেখুন লর্ড হেস্টিংস, আর্ল আমহার্স্ট, লর্ড ক্যানিং, জেমস প্রিন্সেপ, আলেকজান্ডার কানিংহাম চাইকি জন মার্শালের নাম কিন্তু আমরা সবাই কম বেশি শুনেছি। ইতিহাসের পাতা থেকে শুরু করে কলকাতার বিখ্যাত কিছু রাস্তা অথবা গঙ্গার ধারে কোন ঘাটের নামে এরা এখনো নিজস্ব স্বকীয়তায় কলকাতার বুকে জ্বলজ্বল করছেন।
এই হলো আমাদের অর্থাৎ বাঙ্গালীদের দুর্ভাগ্য। উপরে যাদের নাম শোনেননি বা শুনলেও তারা আমাদের ইতিহাস বইয়ের পাদটিকা হয়েই থেকে গেছেন, সেই ননীগোপাল, রাখালদাস অথবা বিরজাশংকর প্রত্যেকেই ছিলেন স্বনামধন্য বাঙালি এবং এই বছরের প্রজ্ঞা পূজাবার্ষিকীতে শুভব্রত বসুর লেখাটি পড়লে বুঝতে পারবেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে বিপ্লবীদের কথা আমরা আজও কিছুটা হলেও মনে রেখেছি তাদের পাশাপাশিই এদের নামও থাকা উচিত। হ্যাঁ এরা কেউ সশস্ত্র বা অহিংস রাজনৈতিক মুভমেন্ট করেননি, কিন্তু যা করে গেছেন তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল এখন আমরা পাচ্ছি। জাতি হিসেবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য এবং ভারতীয়দের তুলনামূলকভাবে নিকৃষ্ট প্রতিপন্ন করতে বহিরাগত আর্যদের দ্বারা সভ্যতা স্থাপন, বেদ ভারতবর্ষের বাইরে থেকে এসেছে এই তথ্য এবং সংস্কৃত ভাষা যা ভারতীয় সভ্যতার এবং ভাষার স্তম্ভস্বরূপ তাও ইউরোপ থেকে এসছে এবং সর্বোপরি ম্যাক্সমুলার এর আর্যতত্ত্ব যে অন্তঃসারশূন্য তা প্রমাণ করে গেছেন উপরে উল্লেখিত বাঙালি সন্তানেরা। গল্পের ছলে লেখক এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর এমন এক ইতিহাস যা আমাদের অবশ্যই পড়া উচিত। জানা উচিত কিভাবে ব্রিটিশদের প্রবল বাধা এবং ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে রাখালদাস বা ননীগোপাল আবিষ্কার করেছেন এমন এক সভ্যতা যা সময়ের হিসেবে ইউরোপিয়ান সভ্যতার থেকে অনেক প্রাচীন এবং মানব সভ্যতার একদম প্রথম দিকের নিদর্শন। তাতে আশা করা যায় শ্রী নীরদচন্দ্র চৌধুরীর আত্মঘাতী এবং আত্মবিস্মৃত জাতি হিসেবে বাঙালির বদনাম কিছুটা হলেও কম হবে।
লেখক কে ধন্যবাদ এরকম একটি বিষয় নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ অথচ টানটান উত্তেজনার এরকম একটি লেখা আমাদের দেওয়ার জন্য। শুধু একটাই অভিযোগ..... দু একটি জায়গায় সালের মিসপ্রিন্ট চোখে পড়ল যা অতি ফাইন বাসমতি রাইস খেতে খেতে মুখে কাঁকড় পরার মতো। বাট ওটুকু মেনেই নেওয়া যায়।
Comments