প্রজ্ঞা পূজাবার্ষিকী হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই যে উপন্যাসটা শুরু করলাম এবং ২ ঘন্টা টানা পড়ে শেষ করলাম সেটা হল "তিন বাহু দশ মুখ" খ্যাত অনির্বাণ মুখার্জীর চট্টরাজ সিরিজের তৃতীয় গল্প নীল গাছের খিদে । বুঝতেই পারছেন উপন্যাসটি যথার্থ অর্থে পেজ টার্নার। তার একটা বড় কারণ, উপন্যাসের একটা বড় অংশ লেখক অসাধারণ মুন্সিয়ানার সাথে পাঠককে একটা দ্বন্দ্বে থাকতে বাধ্য করেন যে ঘটনাটি একটি মার্ডার মিষ্ট্রি না প্যারানরমাল একটিভিটি। আর এই দোলাচলে থাকতে থাকতে পাঠক বুঝতেও পারবে না কখন উপন্যাসটি বাঁক নিয়েছে এক দুর্দান্ত সিরিয়াল কিলিংয়ের দিকে।
খুব ছোট্ট করে কাহিনী সংক্ষেপ বলে নিচ্ছি। পানাগড় থেকে কলকাতা ফেরার ওল্ড দিল্লি রোডে গলসি থানার কাছাকাছি এক রোডসাইড হোটেল কাম রেস্টুরেন্ট। তার নামও রোডসাইড হোটেল। এক সন্ধ্যা বেলা সেই হোটেলে রুম বুক করে একটি কাপল এবং রাতের বেলা মেয়েটি ঘর থেকে উধাও হয়ে যায়। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রাথমিক সন্দেহে পুলিশ ছেলেটিকে কাস্টডিতে নেয়। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে এক গা ছমছমে ঘটনা। হোটেলের এই বিশেষ রুমটিতে একটি নীল গাছের ছবি আছে যাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মানুষ। হোটেলের এক কর্মচারী দাবি করে কয়েক বছর আগে এই বন্ধ ঘর থেকেই উধাও হয়ে যান আরেক গেস্ট এবং এই দুই রহস্যময় উধাও হয়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী ওই ভৌতিক নীল গাছের ছবি। প্রত্যেকবার একটি লোক উধাও হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ওই গাছের পাশে লোক সংখ্যা বেড়ে যায়। নিখোঁজ মেয়ের সন্ধানে নামা ইনভেস্টিভেটিভ অফিসার নিজেও রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। অবশেষে এই অদ্ভুতুড়ে কেস আসে চট্টরাজের কাছে। বাকিটা?? পড়ে জানতে হবে।
অনেকদিন পর একটা আধা ভৌতিক আধা রহস্য গল্প এইভাবে আমাকে মাথা ঘামাতে বাধ্য করে। ইনভেস্টিগেশন চলাকালীন উঠে আসে একের পর এক রহস্যজনক তথ্য এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যজনক তথ্যটি হল এক অপরিচিত লেখক তার গল্পের মাধ্যমে অলরেডি হোটেল রুমের এই রহস্যজনক ঘটনা লিখে দিয়েছেন। কে এই অপরিচিত লেখক বা তিনি আগে থেকে কিভাবে আন্দাজ করছেন মৃত্যুগুলি?? গল্পের মধ্যে পাঠককে নিজেদের মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ ব্যবহারের যথেষ্ট রসদ জুগিয়েছেন লেখক।
আফটার অল ভৌতিক কান্ড কারখানা এবং তার পাশে প্যাটার্ন ফলো করে সিরিয়াল কিলিং। আর কি চাই পাঠকদের?? প্রজ্ঞার প্রথম উপন্যাসেই ওভার বাউন্ডারি।
Comments